Select language to read news in your own language


গ্রন্থ সমালোচনাটি পড়ুন এবং একটি ইমেজ সহ আপনার বইয়ের কথা Upload করে অন্যকে পড়ান। SatSakal Facebook Page টি লাইক করে সঙ্গে থাকুন।


পাঠ প্রতিক্রিয়া: আনন্দকানন শারদীয়া ১৪৩০


নীলেশ নন্দী


বর্তমান সময়ের বাজার চলতি শিশু-কিশোর শারদীয়া পত্রিকাগুলির মধ্যে দারুণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে "আনন্দকানন" পত্রিকা। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী থেকে শুরু করে কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়, জয়ন্ত দে, চুমকি চট্টোপাধ্যায়, সমুদ্র বসু, কৃষ্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ প্রখ্যাত লেখক-লেখিকাগণ সকলেই স্বমহিমায় উপস্থিত এই শারদীয়া সংখ্যায়। শুরুতেই সম্পাদকীয় কলম পড়ে পুজোর গন্ধ পেলাম। মন নস্টালজিয়ায় ভরে উঠল। তারপরেই পরম শ্রদ্ধেয় ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের কলমে তাঁর ছেলেবেলায় স্কুলে যাওয়ার স্মৃতিচারণা পড়ে আমিও যেন ছেলেবেলার সেই স্কুল জীবনের প্রথম দিনে ফিরে গিয়েছিলাম। তাঁর ঝরঝরে লেখনীর জাদু বড়ই মুগ্ধ করল। প্রচেত গুপ্ত তাঁর রচনায় বাস্তব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছেন। সত্যিই তো, বড়রা শুধু রোজগারের কথাই ভাবেন। সিলেবাসের বাইরে ছোটদের সাহিত্যের বই পড়ার সুযোগ দেন না। ফলে তারা যথার্থ শিক্ষার হাত থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী তাঁর "নিরামিষ মাছ" প্রবন্ধে বুঝিয়েছেন যে, ধর্ম, চিন্তা-ভাবনা কিছুই ধ্রুবক নয়। সময়ের নিয়মে তা পাল্টায়। সবকিছুরই সুন্দর ব্যবস্থা আছে, যার ফলে ধর্ম পালনের সঙ্গে আমরা অন্য সবকিছুই করতে পারি। প্রাবন্ধিক সমুদ্র বসু তাঁর "হিমালয়ের রহস্যময় ফুল ব্রহ্মকমল" শীর্ষক প্রবন্ধে হিমালয়ের সবচেয়ে আশ্চর্য ও দুষ্প্রাপ্য ফুল ব্রহ্মকমলের প্রস্ফুটন এবং সেটির বহুবিধ গুণাগুণ সম্পর্কিত সমৃদ্ধময় আলোচনা করেছেন।
      এরপর আসি বড়গল্পের কথায়। লেখক অভীক সরকার "ন্যাপলাদার পাগলা গারদ" গল্পের মাধ্যমে বুঝিয়েছেন সমাজের কিছু সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত কিভাবে সাম্প্রদায়িক হিংসার শিকার হচ্ছেন। গল্পটি আদ্যন্ত কৌতুক এবং ভৌতিক। ঠিক তারপরেই শ্রদ্ধেয় শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কলমে "রামবাবু এবং কানাইকুন্ডু" গল্পটি পড়ে মন নস্টালজিয়ায় ভরে উঠল। গল্পটি যেমন মজাদার, তেমনই শিক্ষণীয়। সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের "দাদুর ইঁদুর" গল্পটিও বেশ মজাদার। জয়ন্ত দে তাঁর "হুলো এবং রিবেরাল" গল্পের মাধ্যমে বর্তমান সময়ের সামাজিক অবস্থানকে তুলে ধরেছেন। চুমকি চট্টোপাধ্যায় "ডিংকির নতুন বন্ধু" গল্পে দারুণ ইতিবাচক দিক তুলে ধরেছেন। কমলেশ কুমারের "পুরস্কার" দারুণ অনুপ্রেরণামূলক গল্প। কৃষ্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলমে অনুসন্ধানী সুতীর্থ সান্যালের "সাজাহানের নীলকান্তমণি" গল্পটি বেশ দারুণ লাগল। জয়দীপ লাহিড়ীর "পুতুলখেলা" গল্পটি যেমন গা-ছমছমে, তেমনই আবেগপ্রবণ। উৎস ভট্টাচার্যের "কল্পলোকের রোমাঞ্চকর" গল্পটিও দারুণ ভয়ের। দেবদত্তা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলমে "রুবাই যখন গোয়েন্দা" গল্পটি অসাধারণ! শঙ্কর চ্যাটার্জীর "ছেলেধরার গল্প" পড়তে বেশ দারুণ লাগে। তাছাড়া, মনজিৎ গাইনের"মহাকালবাবার আতঙ্ক", শিশির বিশ্বাসের "হরুগিন্নির হাতের কাজ", মনীষ মুখোপাধ্যায়ের "রাজা", অনুষ্টুপ শেঠের "বুটুং পিঁপড়ের গল্প" এবং লুৎফুল কায়সারের "লেট নাইট অফিস" গল্পগুলিও অনবদ্য।
      আমার লেখা অণুগল্প "রাগী স্যারের দুর্দশা" একটি বিচ্ছু ছেলে এবং একজন রাগী শিক্ষকের গল্প। গল্পটি যেমনই হাসির, তেমনই একটি সামাজিক বার্তা ছোট্ট বন্ধুদের এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
      এবার আসি ছড়ার প্রসঙ্গে। প্রথমেই পবিত্র সরকারের "অপেক্ষা করো" এবং দীপ মুখোপাধ্যায়ের "জোনাকি নেমে আসে" ছড়া দু'টি পড়ে মন নস্টালজিয়ায় ভরে উঠল। স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর "পুজোর দিনে" এবং সবিতা বিশ্বাসের "দুগ্গা মায়ের জয়" ছড়া দু'টি পড়তে পড়তে পুজোর আমেজে ভেসে যাই। অংশুমান চক্রবর্তী তাঁর "দিদি-ভাই" ছড়াটির মাধ্যমে ভাই এবং বোনের মধ্যের দৃঢ় বন্ধনের ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রদীপ কুমার সামন্ত "সাত এর জয়" ছড়ায় সাত এর সমষ্টি নিয়ে তাঁর লেখনীর দক্ষতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন, তা রামধনুর সাত রঙ হোক বা মহাকাশের সপ্তর্ষিমন্ডলই হোক। তাছাড়া, অভীক বসুর "বাঘদর্শন", শ্যামাচরণ কর্মকারের "ছড়া লেখা সহজ নয়", স্বপন কুমার বিজলীর "জ্যোৎস্না রাতে", নির্মল করণের "মাটির ঘরের খুকু" এবং বিদ্যুৎ মিশ্রর "স্বার্থ নিজের ভুলে" ছড়াগুলিও দারুণ।
      বিজ্ঞান সম্পর্কিত দু'টি লেখা দেবাশিস কর্মকারের "ভারতের বিজ্ঞানচর্চা তথা মহাকাশ অভিযান" এবং কমলবিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের "তিন মানুষের দেশ" দারুণ সমৃদ্ধময় এবং এককথায় অসাধারণ! রূপা মজুমদারের কলমে "চটকপুর ইকো ভিলেজ কমপ্লেক্স" ভ্রমণকাহিনী পড়ে বেশ ভালো লাগল।
      খেলা বিভাগে তাপস বাগের কলমে টেনিসের দুই উজ্জ্বল নক্ষত্র কার্লোস আলকারাজ এবং মার্কেতা ভন্দ্রোসোভার অনুপ্রেরণামূলক কাহিনী পড়ে মুগ্ধ হলাম। তাছাড়া, ছোটদের বিভাগে ছোট্ট বন্ধুদের লেখা গল্প-ছড়া অন্যান্য লেখার চেয়ে কম ভালো নয়। তাদের লেখাগুলিও বেশ সুন্দর। জানা অজানা বিভাগে সুলগ্না ব্যানার্জীর লেখা পড়েও অনেক কিছু জানা যায়। সায়ন তালুকদারের মজার পাতাটিও বেশ সুন্দর। সঙ্গীত, নৃত্য এবং অভিনয় জগতের চার উজ্জ্বল নক্ষত্র অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দ্রাবলী রুদ্র দত্ত, সন্দীপ গোপ এবং শুভশ্রী গাঙ্গুলির সাক্ষাৎকার পড়ে তাঁদের জীবনের নানা অজানা কথা জানতে পারলাম। সবশেষে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই পত্রিকার সম্পাদক অগ্নিশ্বর সরকার এবং সহ সম্পাদিকা অমৃতা সিংহরায় মজুমদারকে দিবারাত্রি নিরলস কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে সকল পাঠকের জন্য এমন একটি উৎকৃষ্ট মানের পত্রিকা প্রস্তুত করা এবং পাঠকদের নাগালের মধ্যে তা পৌঁছে দেওয়া। 
"আনন্দকানন" এবছর পাঁচ -এ পা দিল। প্রিয় পত্রিকা এভাবেই আরও সুদীর্ঘ পথ এগিয়ে চলুক এবং সকল পাঠকের মন জয় করুক, এই কামনা করি। সবাইকে জানাই শারদীয়ার আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন। পুজো সকলের খুব ভালো কাটুক।
ads banner
Share the content if you like it.


ads banner

Bangla eDaily to resume soon